মোবাইলের রেডিয়েশন মাপার যন্ত্র নেই বিটিআরসির!
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : হাতে থাকা সেলফোন বা মোবাইলটির মাধ্যমে ব্যবহারকারী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় কি-না, এই প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, স্মার্টফোনের নির্দিষ্ট রেডিয়েশন বা শোষণ হারের (এসএআর-স্পেসিফিক অ্যাবসর্বশন রেট) মধ্যে যেসব মোবাইল রয়েছে, এসবের দীর্ঘ ব্যবহারে মানুষের মস্তিষ্কে টিউমার হতে পারে। আর এই এসএআরের মাত্রা বেশি হলে ফলাফল হতে পারে আরও ভয়াবহ।
এদিকে এসএআরের মাত্রা নির্ধারণে ধরাবাধা কোনো গাইডলাইন না থাকলেও ব্যবহারযোগ্য বা নিরাপদ ফোনের এসএআর রেট প্রতি কেজিতে ০.৬ ওয়াট থেকে ১.৬ ওয়াটের নিচে। ইউরোপের দেশগুলোতে প্রতি কেজিতে সর্বোচ্চ ২.০ ওয়াটস অনুসরণ করা হয়ে থাকে।
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে উৎপাদিত মোবাইল বা আমদানিকৃত মোবাইলের এসএআর রেট বা রেডিয়েশন মাপার যন্ত্রাংশ এবং এই সম্পর্কিত ল্যাব থাকলেও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এখনো কারিগরি সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি।
খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে উৎপাদিত এবং বৈধভাবে দেশে আসা নাম জানা-অজানা হ্যান্ডসেটের রেডিয়েশন পরিমাপ করা সম্ভব না হলে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে মোবাইল ব্যবহারকারীরা।
মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের দাবি করেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি মোবাইলের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি (আইএমইআই) নম্বরের ডাটাবেজ করলেও আমদানি করা মোবাইলের রেডিয়েশন নিয়ন্ত্রণে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যা পরবর্তীতে স্বাস্থ্যগত হুমকির মুখে ফেলতে পারে ব্যবহারকারীদের।
তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি দাবি করেছে, তারা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো ল্যাব হতে প্রদত্ত এসএআর তথ্য অনুসরণ করে দেশের বাজারে হ্যান্ডসেট প্রবেশের অনুমতি দিয়ে থাকে। ফলে দেশের বাজারে উচ্চ রেডিয়েশন যুক্ত হ্যান্ডসেট থাকার সম্ভাবনা নেই।
মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআই) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ (নয় মাসে) মোবাইল ফোন আমদানি হয়েছে। ২০১৭ সালে দেশে আমদানি হয়েছিল ২ কোটি ৮০ লাখ (নয় মাসে) মোবাইল ফোন। অর্থাৎ দেশে প্রতি মাসে প্রায় ২৬ লাখের বেশি মোবাইল ফোন আমদানি করা হয়ে থাকে।
বর্তমানে দেশে এসব মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানির অনাপত্তি প্রদানের সময় সংশ্লিষ্ট হ্যান্ডসেটের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো ল্যাব থেকে এসএআর তথ্য পর্যালোচনা করে রেডিয়েশনের আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে অনুমতি দিয়ে থাকে বিটিআরসি।
অপরদিকে দেশে হ্যান্ডসেট সংযোজনের ক্ষেত্রে মোবাইলফোন হ্যান্ডসেটের মূল উপাদান প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড অ্যাসেম্বিলি বা পিসিবিএ’র অনুমতি প্রদানের সময় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো ল্যাব থেকে এসএআর রিপোর্ট পর্যালোচনা করে রেডিয়েশনের আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে অনুমতি দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
এসব বিষয়ে বিটিআরসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, মোবাইল রেডিয়েশন পরিমাপে কোনো যন্ত্রপাতি বিটিআরসিতে নেই। তবে রেডিয়েশন পরিমাপের যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য টেস্টিং সুবিধা সম্পন্ন একটি ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিটিআরসি।
সংস্থাটি জানিয়েছে, আইএমইআই ডাটাবেজ ব্যবহার করে অদূর ভবিষ্যতে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্ট্রার বা এনইআইআর স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি। ফলে বিটিআরসি অনুমোদিত কোনো ধরনের মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট মোবাইল নেটওয়ার্কে সংযোগ স্থাপন করতে পারবে না।
সূত্র: প্রিয়.কম