করোনা ঠেকাতে পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার উদ্যোগ, অপপ্রয়োগ আরো বাড়বে তাই আপত্তি

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : করোনার বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, তাদের যে পরিমান ক্ষমতা আছে তার অপপ্রয়োগ ঠেকানো যাচ্ছে না। নতুন ক্ষমতা দেওয়া হলে অপপ্রয়োগ আরো বাড়বে।

আইন পরিবর্তন করতে এরইমধ্যে ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কী ধরনের সংশোধন প্রয়োজন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে তার প্রস্তাবনা চাওয়া হয়েছে।

তবে পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি দ্রুত কার্যকর হচ্ছে না বলে জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘এখনই পুলিশকে সেই ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে না। আগামী ১৭ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত লকডাউনের বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে সম্মতি দিয়েছেন। কিন্তু এই মহামারি কতদিন থাকবে সেটা তো আমরা জানি না। এই কারণে পুলিশকে কিছু ক্ষমতা দেওয়ার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশের হাতে তো আসলে কোন ক্ষমতা নেই। কাউকে তো তারা মাস্ক পরতে বাধ্য করতে পারছে না। তাই আমরা আলাপ আলোচনা করছি। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে আইনটির কী সংশোধন করে পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া যায়, সেটা জানতে চাওয়া হয়েছে।’’

প্রতিমন্ত্রী জানান তাদের কাছে প্রস্তাবনা পেলে সেটি মন্ত্রীপরিষদে উঠবে এবং এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত লাগবে। এরপর রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করবেন। ‘‘এই কাজটা এখনই হচ্ছে না৷ আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, বাস্তবায়ন করতে একটু সময় তো লাগবে,’’ বলেন ফরহাদ হোসেন।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ও সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘‘পুলিশের কাছে এই ধরনের ক্ষমতা দেওয়াতে আমি ব্যক্তিগতভাবে কোন সংকট দেখি না। পুলিশ তো কোন কোন ক্ষেত্রে বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করছে। কেউ ট্রাফিক আইন না মানলে তাকে তো জরিমানা করছে। এখন লকডাউন বাস্তবায়ন করতে গেলে পুলিশকে কিছু ক্ষমতা তো দিতে হবে। তা না হলে তারা এটা বাস্তবায়ন করবে কীভাবে? সবকিছুতেই সন্দেহ করলে হবে না। কাউকে না কাউকে তো বিশ্বাস করতে হবে। এখন আপনি পুলিশ ছাড়া কী কোন কাজ করতে পারেন? চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, দুর্ঘটনা সবকিছুতেই পুলিশ লাগে। তবে হয়েছে কী, আইনের কিছু অপপ্রয়োগের কারণে মানুষের মধ্যে এই সন্দেহটা তৈরি হয়েছে। কঠোর মনিটরিংয়ে মাধ্যমে এটা বাস্তবায়ন করা গেলে খুব একটা সমস্যা হবে বলে আমি মনে করি না।’’

এ নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যেও দ্বিমত রয়েছে। কেউ কেউ এর বিরোধিতা করছেন৷ তবে সিনিয়র আইনজীবী সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক মনে করেন এর সুবিধা অসুবিধা দুই দিকই রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮ অনুযায়ি সিভিল সার্জনদের কিছু ক্ষমতা দেওয়া আছে। কিন্তু এখানে পুলিশের কোন ক্ষমতা নেই। এই যে ঈদের আগে হাজার হাজার মানুষ ফেরিতে গিয়ে উঠল, পুলিশের তো কিছুই বলার নেই। কেউ মাস্ক পরছে না, সেখানেও পুলিশের কিছু বলার নেই। ফলে মাঠ পর্যায়ে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে পুলিশকে কিছু ক্ষমতা দিতে হবে। আবার বিপত্তিটা হল, পুলিশ ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করেই অভ্যস্ত। এখন এই ক্ষমতাটা পেলে যে অপপ্রয়োগ করবে না, সেটা তো কেউ বলতে পারে না। তবে পুলিশের যারা দায়িত্বশীল আছেন তারা যদি ঠিকমতো দেখভাল করেন তাহলে আমি পুলিশকে এই মুহুর্তে এই ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে।’’

তবে এর পক্ষে নন মানবাধিকার কর্মীরা। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘‘পুলিশের হাতে এখন অনেক ক্ষমতা। সেটাই তারা অপপ্রয়োগ করছে। এখন যদি তাদের নতুন করে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয় তাহলে মানুষ আরো বেশি হয়রানির শিকার হবেন। ফলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাই এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন।’’

আরেকজন মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন মনে করন পুলিশকে ক্ষমতা দেয়ার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। লকডাউন ঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা দায়ী। তিনি বলেন, ‘‘সকালে বলছে, লকডাউন, বিকেলে ব্যবসায়িদের চাপে দোকান খুলে দিচ্ছে। ফলে সরকার নিজের সিদ্ধান্তেই থাকতে পারছে না। সরকার যদি কড়া বার্তা দিতে পারতো তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। বরং পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা না দিয়ে, সেনাবাহিনী, বিজিবি মাঠে টহলের জন্য নামালে বেশি সুফল পাওয়া যাবে। পুলিশ এই ক্ষমতা প্রয়োগের চেয়ে বিজিবি, সেনাবাহিনী টহল দিয়ে মাইকিং করলে আরো বেশি কাজ হবে। আর পুলিশ তো মানুষের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা মেশে। ফলে যিনি তদন্ত করবেন, তিনিই যদি বিচারক হন তাহলে মানুষের সুবিচার পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে যাবে।’’

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button