ডিজেলচালিত ৫ শতাংশের জন্য সব বাসের ভাড়া বাড়ছে ২৭ শতাংশ?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর হিসাবে ঢাকায় বর্তমানে চলাচলরত বাস-মিনিবাসের সংখ্যা কম-বেশি পাঁচ হাজার। আর চলাচল করা বাস-মিনিবাসের ৯৫ শতাংশই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে সিএনজি। ডিজেলের দাম বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে ভাড়া প্রায় ২৭ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। নতুন এ ভাড়া শুধু ডিজেলচালিত বাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়ার কথা বলছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তবে ডিজেল আর সিএনজিতে চলাচল করা বাসগুলো কীভাবে আলাদাভাবে শনাক্ত করা হবে, তার স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি বিআরটিএর কর্মকর্তারা। পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মাধ্যমে সিএনজিচালিত সব বাস নতুন ভাড়া কার্যকরের সুযোগ পেতে যাচ্ছে।

জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোয় মালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার বিআরটিএ কার‍্যালয়ে ‘যাত্রীবাহী মোটরযানের ভাড়া পুনর্নির্ধারণী কমিটি’র এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের বাস ভাড়া ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে যাত্রীপ্রতি কিলোমিটারের জন্য ২ টাকা ১৫ পয়সা। অন্যদিকে মিনিবাসের ভাড়া ২৮ দশমিক ১২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। মিনিবাসের নতুন ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৫ পয়সা। বাসের সর্বনিম্ন ১০ টাকা ও মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ টাকা। অন্যদিকে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। দূরপাল্লার রুটে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা। গতকাল রাতেই ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিআরটিএ।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব বলছে, ঢাকায় বর্তমানে যত বাস চলাচল করে, তার ৯৫ শতাংশই জ্বালানি হিসেবে সিএনজি ব্যবহার করে। ডিজেলে চলে মাত্র ৫ শতাংশ বাস। বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও কম-বেশি একই হারে সিএনজিচালিত বাস চলাচল করে। এর বাইরে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-বগুড়াসহ অনেক দূরপাল্লার বাস বর্তমানে জ্বালানি হিসেবে সিএনজি ব্যবহার করছে। ডিজেলের দাম বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে বাসের ভাড়া বৃদ্ধি করায় সিএনজিচালিত এসব বাস মালিকদেরও ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ দেয়া হলো বলে মনে করছে সংগঠনটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলিয়ে বিআরটিএর ১৩ জন ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এত স্বল্পসংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে বিদ্যমান ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে পারে না বিআরটিএ। সিএনজিচালিত বাস বেশি ভাড়া আদায় করলে বিআরটিএর স্বল্প জনবল দিয়ে কোনোভাবেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে না। অযৌক্তিকভাবে ভাড়া বাড়িয়ে বিআরটিএ সিএনজিচালিত বাসগুলোকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের সুযোগ করে দিচ্ছে।

তবে যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যের সঙ্গে একমত নন বিআরটিএর কর্মকর্তারা। সংস্থাটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার জানিয়েছেন, সারা দেশে যত বাস চলে তার মধ্যে জ্বালানি হিসেবে সিএনজি ব্যবহার করে মাত্র ১-২ শতাংশ বাস। বিআরটিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতুল্লাও। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যতগুলো বাস জ্বালানি হিসেবে সিএনজি ব্যবহার করে, তার কোনোটাই সিএনজিচালিত বাস হিসেবে আমদানি করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে সেগুলো সিএনজিতে রূপান্তর করা হয়েছে। এসব বাস ব্যবহার করতে গিয়ে দেখেছি, ছয় মাস যেতে না যেতেই ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি হওয়ায় মালিকরা আর বাসের জ্বালানি ব্যবস্থা সিএনজিতে রূপান্তর করছেন না। সিএনজিচালিত বাস বর্তমানে দেশে খুব বেশি নেই।

তিনি আরো বলেন, তেলের দাম বাড়ল, এতে ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া বাড়ানো হলো। কিন্তু গত আট বছরে তো সিএনজিচালিত বাসের ভাড়া বাড়েনি। কিন্তু এই সময়ে এসব বাসের পরিচালন খরচ তো বেড়েছে। তাই আমি মনে করি সিএনজিচালিত বাসের ভাড়া বাড়ানো নিয়েও সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।

তবে নতুন ভাড়া কেবল ডিজেলচালিত বাসের জন্য প্রযোজ্য বলে জানিয়েছেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাসের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ভাড়া কেবল ডিজেলচালিত বাসগুলো আদায় করতে পারবে। সিএনজিচালিত বাসের ভাড়া ১ পয়সাও বাড়বে না।

কোন বাস সিএনজিতে চলে আর কোন বাস ডিজেলে চলে—তা শনাক্ত কীভাবে করা হবে এমন প্রশ্নে তিনি আরো বলেন, প্রথমত আমরা পরিবহন মালিকদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছি নতুন ভাড়া কেবল ডিজেলচালিত বাসের জন্য। তার পরও যদি কোনো সিএনজিচালিত বাস নতুন ভাড়া কার্যকর করে, তাহলে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিষয়টি তদারক করবে।

এদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপেক্ষিতে ৬০ পয়সা ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। প্রতি ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২ টাকা ৩০ পয়সা। এই ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে লঞ্চ ভাড়া বাড়ল ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। অন্যদিকে ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা। ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে লঞ্চ ভাড়া বেড়েছে ৪২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। লঞ্চের সর্বনিম্ন ভাড়া ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়েছে।

 

 

সূত্র: বণিক বার্তা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button