অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে কালীগঞ্জ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

বিশেষ প্রতিনিধি : সরকারী নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ভর্তি বানিজ্য, সহকর্মীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায়, অনিয়মিত উপস্থিতি, নিজের ইচ্ছে মত অতিথি শিক্ষক নিয়োগ, বিভিন্ন অজুহাতে বেতনের সাথে অতিরিক্ত ফি আদায়সহ নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে কালীগঞ্জ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল আহেদের বিরুদ্ধে।

সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৪ জুন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রাশিদা বেগমের বদলি হয়। পরে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. এরশাদুল্লাহ চলতি দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। কিন্তু সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বরে মো. আব্দুল আহেদ যোগদান করেন। পরে নিয়মানুযায়ী তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আর দায়িত্ব পাওয়ার পর পরই বিদ্যালয়ে চলতে থাকে নানা অনিয়ম ও অব্যস্থাপনা।

অভিযোগ রয়েছে সরকারী নিয়মানুযায়ী বছরের শুরুতে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার বিধান থাকলেও সরকারী এ নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল আহেদ মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে মার্চের শেষের দিকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে এক শিক্ষার্থীকে ভর্তি করেছে বলে।

এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত ওই প্রধান শিক্ষক একধরেন নিয়ম করেই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন, বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে হাফ বা থ্রী-কোয়াটার প্যান্ড পরে ঘোরাফেরা করেন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন খারাপ আচরণ করা সহ রয়েছে উত্যক্ত করার মতো অভিযোগও।

এ নিয়ে বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলেও রেয়েছে অভিযোগ।

বিদ্যালয়ের সৃষ্ট ১২ শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষক ছাড়া চাহিদানুযায়ী ১১ জন শিক্ষকই ছিলেন। তারপরও নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি ইচ্ছে মত অতিথি শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। পরে সেই অতিথি শিক্ষকের নিয়োগ দেখিয়ে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২শত টাকা করে অতিরিক্ত বেতন আদায় করেন। যা গত এপ্রিল মাসের শুরুতেও আদায় করা হয়েছে।

অন্যদিকে, সরকারী নীতিমালা বহির্ভূতভাবে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল আহেদ।

ওই শিক্ষাবর্ষে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ১শত জন নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ওই সংখ্যক নতুন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৭৫০ টাকা ভর্তি ফি নেওয়া হয়।

একই শিক্ষাবর্ষে ৭ম থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও নেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত ফি। ৭ম ও ৮ম শ্রেণিতে ১৭৩৫, ৯ম ও ১০ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের কাছে ১৭৯৫ টাকা নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়াও বিদ্যালয়ের চত্ত্বরে চলে বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাসের নামে কোচিং বানিজ্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীর এক অভিভাবক জানান, ফেব্রুয়ারী মাসের শুরুতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে বিশেষ ক্লাস নামে একটি কর্মসূচি শুরু করতে চায়। যাতে শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে ওই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের কথা বলা হয়। আর এর ফি ধার্য্য করা হয় মাসে শিক্ষার্থী প্রতি ১৫০০ টাকা। কিন্তু অভিভাককদের চাপের মূখে ওই সময় বিশেষ ক্লাস বন্ধ রাখলেও পরে যে কোন দিন শুরুর সময় জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এজন্য ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের ধারণা সরকারী নিয়মনীতি নয়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল আহেদের নিয়মেই চলছে বিদ্যালয়টি।

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল আহেদের মুঠো ফোনে কল দিয়ে পরিচয় দিলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ না করে কেটে দেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নূর-ই-জান্নাত বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। তবে যেহেতু জেনেছেন বিষয়টি তিনি দেখবেন বলেও জানান।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শিবলী সাদিক বলেন, সরকারী কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরণের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা কাম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। প্রমান পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button