নিজ বাসায় বাংলাদেশি তরুণকে গুলি করে মারলো নিউইয়র্ক পুলিশ

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে নিজ বাড়িতে এক বাংলাদেশি তরুণ নিহত হয়েছেন। ১৯ বছর বয়সী ওই যুবকের নাম উইন রোজারিও। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সময় বুধবার (২৭ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে নিউইয়র্কের ওজন পার্কের ১০১ এভিনিউয়ে এ ঘটনা ঘটে। মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯ বছর বয়সী এক তরুণকে নিউইয়র্কের কুইন্সে তার নিজ বাড়িতে পুলিশ কর্মকর্তারা গুলি করে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। নিহত ওই তরুণ মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং গুলিতে নিহত হওয়ার আগে সাহায্যের জন্য ৯১১ নম্বরে ফোন করেছিলেন।

পুলিশ জানায়, বাড়িতে পৌঁছে উইন রোজারিওকে কাঁচি হাতে দেখতে পান তারা। এ সময় এক জোড়া কাঁচি নিয়ে পুলিশ অফিসারদের দিয়ে তেড়ে যান এবং এরপরই একপর্যায়ে কর্মকর্তারা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়।

পরিস্থিতি বেশ উত্তেজনাপূর্ণ, বিশৃঙ্খল এবং বিপজ্জনক হয়ে দারিয়েছিল বলছে পুলিশ। গুলি করার পরপরই মৃত্যু হয় উইন রোজারিওর।

পুলিশকে রোজারিও জানিয়েছিলেন যে, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। নিজের মৃত্যুর মাধ্যমে মানসিক রোগের ইতি টানতে চান।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, নিহত তরুণের ভাই এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং তিনি পুলিশি বিবরণের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, তার মা তার ভাইকে আটকাচ্ছিলেন এবং তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, পুলিশ অফিসারদের তাদের বন্দুক থেকে গুলি করার দরকার ছিল না।

তবে পুলিশ ডিপার্টমেন্টের টহল প্রধান জন চেল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার পর অফিসাররা রোজারিওকে হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি একটি ড্রয়ার থেকে কাঁচি বের করে অফিসারদের দিকে ধেয়ে আসেন। পরে উভয় অফিসারই রোজারিওর ওপর টেজারের মাধ্যমে গুলি করেন এবং তাকে পরাস্ত করা হয়।

জন চেল আরও বলেন, ‘কিন্তু তার মা ছেলেকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন। কিন্তু এটি করতে গিয়ে তিনি ঘটনাক্রমে রোজারিওর শরীর থেকে টেজার সরিয়ে দেন। আর সেই সময়ে রোজারিও কাঁচি তুলে আবার অফিসারদের দিকে তেড়ে আসেন।’

চেল বলেন, ‘এই পরিস্থিতেতে আত্মরক্ষা করার জন্য তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।’

তবে রোজারিওকে কতবার গুলি করা হয়েছে তা জানায়নি পুলিশ। কিন্তু রোজারিওর পরিবারের দাবি, তাকে ছয়বার গুলি করা হয়েছে। এই পুরো ঘটনাটি পুলিশ অফিসারদের শরীরে লাগানো ক্যামেরায় রেকর্ড হয়েছে বলে জানান চেল। যদিও ফুটেজটি তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।

রোজারিওর ১৭ বছর বয়সী ভাই উশতো রোজারিও এক সাক্ষাৎকারে পুলিশের বিরোধিতা জানিয়ে বলেন, তার মা এনকাউন্টারের পুরো সময়জুড়ে তার ভাইকে তার কোলে ধরে রেখেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘এভাবে গুলি করা ছিল অপ্রয়োজনীয়। আমি মনে করি না কেবল একটি কাঁচি দুজন পুলিশ অফিসারের জন্য হুমকি ছিল।‘

উশতো এবং উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও বলেছেন, তাদের পরিবার ১০ ​​বছর আগে বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে অভিবাসী হয়েছিল এবং উইনের স্বপ্ন ছিল মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগদান করা। তবে গ্রিন কার্ড পেতে বিলম্বের কারণে তার সেই পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়।

পুলিশের বিরুদ্ধে তার ছেলেকে হত্যার অভিযোগ করেন তিনি।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, নিউইয়র্কে গত দুই মাসে পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত তৃতীয় ব্যক্তি হচ্ছেন রোজারিও। এ ঘটনায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button