বুইড়া শালিক ও নীতি কথা
কাকন রেজা : গণমাধ্যমের এক বুইড়া শালিক দেখলাম অনেক বড় বড় বুলি কপচাইলেন। নীতি কথা, অতি কথা, পাতি কথা কইলেন। আমি কই, যে গাড়িতে চড়েন হেইডার দাম কত? ওই গাড়ি কিনছেন কি গণমাধ্যমে কাম কইরা? কই, আমি এবং আমার মতন অনেকজন আছেন গণমাধ্যমে, আছেন বার্তা প্রধানগণও, তাদের অনেকেই কোনমতে একটা গাড়ি কিনছেন, কেউ-বা এখনো আসেন বাসে, রিকশায়। আপনে এত টাকার গাড়ি কিনলেন কেমনে? বেয়াদবি নিয়েন না, এইডা আমাগো মতন গরিবগো একটা সাধারণ কিউরিসিটি?
নীতি কথা আর অতি কথার মাঝে গণমাধ্যমকর্মীগো জীবনের নিরাপত্তার ব্যাপারটার কথা কন নাই কেন? গণমাধ্যমের একজন নগন্য কর্মী হিসাবে আপনেরে জিগাই, আমার ছেলেটাও গণমাধ্যমে ঢুকছিল। ইংরেজিতে নিশ্চিত আপনের চেয়ে শতগুন ভালো আছিল। আপনের ইংরেজির নমুনাতো দেখছি। সেই তুলনায় ইংরেজির সাব-এডিটর হিসাবে আমার পোলা ইহসান ইবনে রেজা ফাগুন যারে সবাই চিনতো ফাগুন রেজা হিসাবে তার ধারে-কাছে যাওনের ক্ষমতা নাই আপনের। সেই ছেলেটারে আমার খুন করা হইছে। ঈদে বাড়ি ফিরতাছিল ট্রেনে কইরা। তারে মাইরা ফালায়া রাখছিল লাইনের ধারে। কই আপনিতো একবারও হেই কথা কইলেন না।
বুঝলাম আপনি ব্যাপারটা জানেন না। জানবেন না কেন, প্রশ্নটাতো সেইখানেও। বাংলাদেশের প্রধানতম টেলিভিশন চ্যানেলগুলা, খবরের কাগজ, নিউজ পোর্টাল, বিদেশি সংবাদমাধ্যম কোনটাইতো খবর করতে বাদ দেয় নাই। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন হইছে। মানববন্ধনে আছিলেন আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। আছিলেন অনেক প্রথিতযশা সাংবাদিক এবং সাংবাদিক নেতারা। তাও আপনে জানেন নাই। এই ব্যর্থতা কার, আমাগো না আপনের। গণমাধ্যমের মাথা-মুন্ডুর একটা হবার কারণে এই কথাতো আপনার চক্ষু এবং কানের গোচরে যাওনের কথা। কিন্তু যায় নাই। হয়তো বিষয়ডার গুরুত্ব দেন নাই। হয়তো একজন তরুণ গণমাধ্যমকর্মীর মৃত্যু আপনের ভারী কান-মাথা নাড়াইতে পারে নাই।
আপনে বা আপনেরা যখন তাই নীতিকথা কন, তখন মনডার ভিতর বড় লাগে। নীতির সাথে কথার মিল না হইলে লাগনেরই কথা। আপনে খবরের মানুষগো কি করতে হইবো শিখাইবেন, কি করতে হইবো না নিষেধ করবেন। কিন্তু হ্যারা বাঁইচা কিভাবে আছে হেইডা কইবেন না, জিগাইবেন না, তয় কেমতে হয়। এক ওয়েজবোর্ডের কথা বহুত শুনছি। এইডা অহন আমাগো গায়ে লাগে না। কারণডা আপনেও জানেন, আমরাও জানি। ওয়েজবোর্ড আমাগো জীবনে আগেও কোন পরিবর্তন আনে নাই, অহনো আনবো না। ওই নতুন ঢুকলে আট থাইকা বারো। পুরান হইলে বিশ থাইকা চল্লিশ। দুই এক জায়গায় হয়তো এর বেশি কিছুটা দেয়। তয় সবার ক্ষেত্রেই না। যাগো আপনেগো সাথে লাইন-কানেকশন ভালো আছে তাগো কপালেই জুটে বাড়তিটা।
যাউক গা। তাও আপনাগো নমস্কার। আপনেরাই এখনো নমস্য আমাগো কাছে, যেহেতু বিকল্প কিছু নাই। তাই আপনাগোই কই, আমাগো দিকে একটু নজর দেন। তরুণ যারা আছে, যারা নিজের জান লাগাইয়া কাজ করতে চায়, তাগো জানে বাঁচবার দেন। তাগো জীবন নিরাপদ করনের চেষ্টা করেন। সাথে আমাগো দুইডা ভাত-মাছ খাওনের এবং জীবনের টানাপোড়েন থাইকা উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন। অহনো সময় আছে, আমার এক ফাগুন গেছে, আরো অনেক ফাগুন আছে ওগো জান বাঁচানের লাইগা কিছু করেন। অন্যগো খাইয়া-পইড়া বাঁচনের সুযোগ কইরা দেন। দোহাই লাগে সৃষ্টিকর্তার, কিছু একটা করেন।
লেখক ও সাংবাদিক