শিগগিরই মিলছে না ই-পাসপোর্ট
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট শিগগিরই মিলছে না। আগামী আগস্ট মানে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু করার কথা রয়েছে। তখনই এটি সব গ্রাহকের হাতে তা তুলে দেয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র।
এদিকে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অধিদফতর (ডিআইপি) চলতি মাসেই এর কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, অত্যাধুনিক এ পাসপোর্ট গ্রাহকপর্যায়ে বিতরণ করতে দফায় দফায় বৈঠক চলছে। একেবারেই নতুন এই কার্যক্রমে প্রক্রিয়াগত কিছু সমস্যা দেখা দেয়। তবে এরই মধ্যে অনেক কিছু গুছিয়ে আনা হয়েছে।
২০১৮ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায় জার্মানির সরকারি প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস জেএমবিএইচের সঙ্গে ডিআইপির ই-পাসপোর্ট সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরেই অত্যাধুনিক এ পাসপোর্ট গ্রাহকের হাতে তুলে দেয়ার কথা জানায় ডিআইপি।
তা সম্ভব না হওয়ায় চলতি বছরের শুরুর দিকে নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়। নানা জটিলতায় এতেও পিছিয়ে যেতে থাকে।
ওই কর্মকর্তা জানান, ই-পাসপোর্ট কার্যকর করতে প্রকল্পের আওতায় জার্মানি থেকে ৫০টি ই-গেট আসার কথা রয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত এসেছে মাত্র তিনটি ই-গেট। এগুলো হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ই-পাসপোর্ট বিতরণ করা হলেও দেশের বিমান ও স্থলবন্দরগুলোতে ই-গেট স্থাপন শেষ করা না গেলে এর সুফল মিলবে না।
ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র পেলে আগামী ১ জুলাই থেকেই ই-পাসপোর্ট বিতরণ করার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত ই-পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিক সময় নির্ধারণ করা হলেও তা পিছিয়ে যায়।
তবে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে স্থাপিত ই-গেটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছেন। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, উদ্বোধনের পর কূটনৈতিক পাসপোর্ট বিতরণের পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে রাজধানীর উত্তরা পাসপোর্ট অফিস থেকে সীমিত পর্যায়ে সাধারণ গ্রাহককে ই-পাসপোর্ট দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এতে সফল হলে ডিআইপির সব অফিস থেকেই ই-পাসপোর্ট সরবরাহ করা হবে।
এদিকে ইমিগ্রেশন পুলিশকে ই-গেট বা ই-পাসপোর্ট ব্যবহারের বিষয়ে প্রশিক্ষিত হতে হবে। তাদেরও এখন পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। পাঁচ বছর ও ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের ফিও গত ৮ জুলাই পর্যন্ত নির্ধারণ করা যায়নি।
সূত্র জানায়, পৃথিবীতে ১১৯ দেশের নাগরিকরা ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করে। এবার ওই দেশগুলোর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা বাংলাদেশেরও।
বর্তমানের যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের মতোই ই-পাসপোর্টেও একই ধরনের বই থাকবে। তবে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের বইয়ের শুরুতে ব্যক্তির তথ্যসংবলিত যে দুটি পাতা আছে, তা ই-পাসপোর্টে থাকবে না। সেখানে পলিমারের তৈরি একটি কার্ড থাকবে। এই কার্ডে সংরক্ষিত চিপে পাসপোর্ট বাহকের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।
পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে এমআরপি ডাটা পেজে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। এ ই-পাসপোর্টের মেয়াদ বয়স অনুপাতে ৫ ও ১০ বছর হবে।
এ ছাড়া ই-পাসপোর্ট চালু হলেই এমআরপি পাসপোর্ট বাতিল হবে না বলে জানায় পাসপোর্ট অধিদফতর।
তবে নতুন করে কাউকে এমআরপি পাসপোর্ট দেয়া হবে না। যাদের এমআরপির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে তারা নবায়ন করতে গেলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে এমআরপি পাসপোর্ট তুলে নেয়া হবে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে দ্রুততম সময়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ই-পাসপোর্ট প্রদানের ঘোষণা দেন। এর পর প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিআইপি) তৈরি থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক সব কাজ দ্রুততম সময়ে শেষ করে পাসপোর্ট ও বহির্গমন অধিদফতর।
সূত্র আরও জানায়, বর্তমান এমআরপি ব্যবস্থা থেকে ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থায় উত্তরণ ঘটলে বাংলাদেশিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঝামেলাবিহীনভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন। কারণ ই-পাসপোর্ট এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে বিদ্যমান বইয়ের সঙ্গে একটি ডিজিটাল পাতাজুড়ে (ডাটা পেজ) দেয়া হবে।
ওই ডিজিটাল পাতায় উন্নতমানের মেশিন রিডেবল চিপ বসানো থাকবে। এতে সংরক্ষিত থাকবে পাসপোর্টধারীর সব তথ্য। ডাটা পেজে থাকবে পাসপোর্টধারীর তিন ধরনের ছবি, ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশও। ভ্রমণকালে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ কম্পিউটারের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে পাসপোর্টধারীর সব তথ্য-উপাত্ত জানতে পারবেন।
তা ছাড়া সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। ঝামেলাহীনভাবে ই-গেট ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করা যাবে।
সূত্র বলছে, বর্তমানে পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে যে ধরনের এমআরপি বই দেয়া হচ্ছে সেগুলো জাল করা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে এ ধরনের কয়েকটি জাল এমআরপি ধরাও পড়েছে।
বিদ্যমান এমআরপিতে ৩৮টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকলেও এর বেশিরভাগই জাল করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু ই-পাসপোর্ট বইয়ের পলিকার্বোনেট ডাটা পেজ জাল করা সম্ভব হবে না। এ ছাড়া ই-পাসপোর্টে থাকছে ৪২টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য।