২৫ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সতর্কতা

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ২৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে সতর্ক করতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঈদের আগেই এ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে বলে জানা গেছে।

ভর্তিতে সতর্কতা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘যেসব বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে আইন অমান্য করে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে সেখানে শিক্ষার্থীরা যাতে ভর্তি না হয় সে জন্য গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে প্রতারিত না হয় সে জন্য এমন চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে ছাত্রছাত্রীরা বিপদে পড়বে। তাদের সনদ বৈধ হবে না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিহ্নিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কয়েকটির বিরুদ্ধে অবৈধ ক্যাম্পাস চালানোর অভিযোগ রয়েছে। কোনোটির বিরুদ্ধে আছে অননুমোদিত প্রোগ্রাম চালানোর অভিযোগও। কয়েকটি আবার শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশপ্রাপ্ত। সনদ বাণিজ্যসহ নানা অপরাধে কয়েকটি অভিযুক্ত এবং বন্ধ ঘোষিত। কিন্তু উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে সেগুলো পরিচালিত হচ্ছে। আবার মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের অভিযোগ আছে কয়েকটির বিরুদ্ধে। নানা অভিযোগে বন্ধের সুপারিশপ্রাপ্তও কয়েকটি।

ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন বলেন, ‘এ গণবিজ্ঞপ্তি দেয়া ইউজিসির রুটিন কাজগুলোর একটি। ঈদের আগেই গণবিজ্ঞপ্তিটি জারি করা হবে।’

ইউজিসি কর্মকর্তারা আরো জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে একজন শিক্ষার্থীর অনেক টাকা খরচ হয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যাতে প্রতারিত না হয়, সে জন্য গণবিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়ে থাকে। তাতে ভর্তির আগে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তথ্য যাচাইয়ের নির্দেশনা থাকে। পাশাপাশি বিজ্ঞপ্তিতে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। এটা অনেকটাই নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। কিন্তু সতর্কতা দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে বা সনদ নিলে তা কাজে লাগে না।

এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় বা ইউজিসি ভবিষ্যতে কোনো দায়দায়িত্ব নেবে না। কেননা চাকরিদাতারা প্রায়ই ইউজিসি থেকে সনদ সত্যায়ন করে থাকে। তখন ইউজিসি প্রকৃত তথ্য সরবরাহ করে থাকে। এ কারণেই টাকা খরচের পর যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য শিক্ষাবর্ষের আগেই তথ্য জানানোর ব্যবস্থা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সার্বিক তথ্য দিয়ে জারি করা ইউজিসির গণবিজ্ঞপ্তি সংস্থার ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

সংশ্লিষ্ট্র সূত্রে আরও জানা গেছে, কালো তালিকাভুক্ত ২৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯টি নতুন। এগুলো এখনো কার্যক্রম শুরু করেনি। এগুলো হচ্ছে- ঢাকার রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জের রূপায়ন একেএম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস, রাজশাহীর আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহীর শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, খুলনা খান বাহাদুর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশালের ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল স্টান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনিভার্সিটি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি কর্মকর্তারা জানান, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পাওয়ার পরে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর জন্য অনুমতি নিতে হয়। উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলো সেই অনুমতি এখনো পায়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইউজিসির প্রস্তাবিত তালিকায় ঠাঁই পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি হলো ইবাইস। এটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) বা মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। আদালতে অনেক আইনি লড়াই করেও বিশ্ববিদ্যালয়টির কোনো পক্ষ সফল হয়নি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি ঠিকানাবিহীন বলে জানা গেছে।

বিওটি নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে আরো চারটিতে। এগুলো হলো- সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। এগুলোর মধ্যে শেষটির ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। ইউজিসির কোনো মতামত ছাড়াই প্রায় দু’বছর আগে রহস্যজনক কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নেয়। আবার একই কারণে ইউজিসির সঙ্গে কোনো আলাপ ছাড়াই ভর্তি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ব্যাপারে রোববার (৪ আগস্ট) ইউজিসিতে একটি চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

নানা অভিযোগে ২০০৬ সালে সরকার ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়। এ সংক্রান্ত আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলার পর প্রাপ্ত রায়ের আলোকে চলছে আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি এবং দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা। এর মধ্যে প্রথমটির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ক্যাম্পাস চালানোর অভিযোগ ছিল। সেগুলো উচ্ছেদে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পুলিশ বিভাগকে অনুরোধ করে চিঠি দেয়া হয়েছিল।

২০১৭ সালের এপ্রিলে সরকার হাইকোর্টের নির্দেশে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়। এ কথাটিও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করার নির্দেশনা আছে বলে ইউজিসি সূত্র জানায়।

অননুমোদিত ক্যাম্পাস থাকায় চারটি বিশ্ববিদ্যালয়কে কালো তালিকার মধ্যে রাখা হয়েছে। তার মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া বনানীর ১৭ নম্বর রোডে অননুমোদিত ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। এ ছাড়া মানিকগঞ্জে স্থাপনের অনুমতিপ্রাপ্ত এনপিআই ইউনিভার্সিটি ঢাকায় ফার্মগেটে ক্যাম্পাস চালাচ্ছে অনুমতি ছাড়াই। বরিশালের ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজও চালাচ্ছে অবৈধ ক্যাম্পাস।

ইউজিসি গত কয়েক মাসে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়ার সুপারিশসহ প্রতিবেদন পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। সেগুলো হচ্ছে ফরিদপুরের টাইম ইউনিভার্সিটি এবং চুয়াডাঙ্গার ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি। এগুলো ইউনিভার্সিটি পরিচালনা সংক্রান্ত আইনের বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করে চলছে বলে ইউজিসির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।

শরীয়তপুরের জেডএইচ সিকদার বিশ্ববিদ্যালয় ও সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয় অননুমোদিত প্রোগ্রাম চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে ইউজিসি। এরমধ্যে পরেরটি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উচ্চ আদালতে একাধিক মামলা চলমান।

ইউজিসি সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল ইউজিসি একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আদালতে রিট করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এক আদেশে বিবিএ, এনভায়রমেন্টাল সায়েন্স, এমবিবিএস, বিডিএস এবং ফিজিওথেরাপি প্রোগ্রামগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি অনুমোদন করার জন্য ইউজিসিকে নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের স্টে অর্ডার থাকা পর্যন্ত উক্ত বিষয়গুলো ওয়েবসাইটে সন্নিবেশিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button