জ্বর সর্দি কাশিতে এত মানুষের মৃত্যু!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : শুক্রবার পর্যন্ত গেল ১৪ দিনে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ১১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর আগে এদের কারো করোনা টেস্ট করা হয়নি। মৃত্যুর পর তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে৷ অধিকাংশের রিপোর্ট এখনো মেলেনি।

গত বুধবার রাতে টাঙ্গাইলের সখীপুরে শামসুল হক (৫০) নামে একজন ব্যক্তির মৃত্যু হয়। শামসুল হক কাকড়াজান ইউনিয়নের বড় হামিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন৷ তার নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ছালেহ আহাম্মদ (৫৫) নামে মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চরজাঙ্গালিয়ার বাসিন্দা ও স্থানীয় মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তারও নমুনা নেয়া হয়েছে।

এছাড়া শুক্রবার ভোরে আশ্রাফ উদ্দিন নামে এক যুবক মারা যান। তিনি লক্ষীপুর সদর উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাড়িতে মারা যান। তার নমুনা নেয়া হয়েছে।

প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশের স্থানীয় গণমাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীর এমন মৃত্যুর খবর আসছে। সেসব খবরের ভিত্তিতে দেখা গেছে, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এসব উপসর্গে ভোগা রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা এ বছর বেশি।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘‘এটা স্বাভাবিক মৃত্যু। দেশে প্রতিদিন আড়াই হাজার মানুষ মারা যান। এখন তো হাসপাতালে রোগী কম৷ তাহলে তারা যাচ্ছেন কোথায়? অনেকেই বাড়িতে চিকিৎসা করতে গিয়ে মারা যাচ্ছেন। আমি বলব, কারো যদি করোনা হয় এবং তিনি যদি বাড়িতে থেকে সুস্থ থাকেন তাহলে তো ভালো। বুঝতে হবে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।”

তবে প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেছেন, ‘‘এটা অস্বাভাবিক৷ আমি ৩০ বছর চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত। কখনোই আমি দেখিনি, এভাবে এত মানুষ মারা যেতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেখাবে বলছে, টেস্ট, টেস্ট এবং টেস্ট।

সেখানে আমাদের দেশে নো টেস্ট, নো করোনা। এরপর মিনিমাম টেস্ট, মিনিমাম করোনা। এখন কিছু টেস্ট হচ্ছে রোগীও ধরা পড়ছে। তারপরও বলব, যেটা হচ্ছে পানিতে বরফ খণ্ড ভাসার মতো। বরফ খণ্ড যখন ভাসে তার ১১ ভাগ পানির নিচে থাকে আর এক ভাগ উপরে থাকে৷ এখানেও করোনা রোগী সেভাবেই দেখা হচ্ছে। আসলে সঠিক সংখ্যাটা আমরা পাচ্ছি না।”

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৯৩০ জন, যা ২০১৯ সালে ছিল ৮২০ জন, ২০১৮ সালে এক হাজার ১০ জন এবং ২০১৭ সালে ছিল ১৪১ জন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই রোগে আক্রান্ত হন ২৬ হাজার ৪৬১ জন ও ফেব্রুয়ারিতে ২৪ হাজার ৯৫০ জন। গত বছরের জানুয়ারিতে ছিল সাত হাজার ৫২০ জন ও ফেব্রুয়ারিতে চার হাজার ৪৬০। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ছিল ছয় হাজার ৭১২ জন ও ফেব্রুয়ারিতে চার হাজার ১১৫ জন।

বাংলাদেশের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো গেল দু’সপ্তাহে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে মৃত্যুর কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে।

শুক্রবার পর্যন্ত গেল ১৪ দিনে ১১৬ জন পর্যন্ত মৃত্যুর খবর দিয়েছে দৈনিক প্রথম আলো। আর দৈনিক সমকাল গেল ১২ দিনে ১১৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। পত্রিকাটি বলছে, এদের কারো শরীরে করোনা ভাইরাস ছিল কি না তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, ‘‘এত মানুষের মৃত্যু স্বাভাবিক না। তবে টেস্ট না করে আসলে বলা ঠিক হবে না, এরা করোনা আক্রান্ত ছিল কি-না। তবে এটা বলা যায়, এদের সবার যদি টেস্ট করা হতো তাহলে হয়তো করোনা রোগী পাওয়া গেলেও যেতে পারত। শুরুতে আমাদের যেভাবে টেস্ট হয়েছে সেটা একেবারেই ঠিক ছিল না। এখন তো কিছু হচ্ছে। আসলে আরো টেস্ট বাড়ানো দরকার। তাহলে হয়ত আসল চিত্র উঠে আসবে।”

অভিযোগ রয়েছে, এসব মৃত্যুর ঘটনায় নমুনা নেয়া হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তারা করোনা আক্রান্ত ছিলেন কি-না সে রিপোর্ট পরে আর মিলছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিপোর্ট মিললে মানুষ সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারতো।

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button