গাজীপুরে আরও ১০ জন করোনা শনাক্ত, ২৪ চিকিৎসকসহ করোনা মুক্ত ২২৭ জন

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : গাজীপুরে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জনসহ এ পর্যন্ত করোনা (কোভিড-১৯) পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে মোট ৩৪৯ জন। অপর দিকে ‘করোনা মুক্ত’ হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২৪ চিকিৎসকসহ  ২২৭ জন।

রোববার (১০ মে) সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জেলা সিভিল সার্জন অফিস ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছেন।

প্রাপ্ত তথ্য অনুয়ায়ী নতুন শনাক্ত ১০ জন গাজীপুর সদরের (মহানগর) বাসিন্দা। করোনা শনাক্ত ৩৪৯ জনের মধ্যে সার্বাধিক গাজীপুর সদরে (মহানগর) ১২৯ জন। এ ছাড়া কালিগঞ্জে ৯১ জন, কাপাসিয়ার ৭০ জন, কালিয়াকৈরে ৩৫ জন এবং শ্রীপুরের ২৪ জন।

অপর দিকে কোভিড-১৯ মুক্ত হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন সর্বাধিক কালীগঞ্জে ৮৭ জন, কাপাসিয়ায় ৫২ জন, গাজীপুর সদরের (মহানগর) ১৩ জন, শ্রীপুর ১৮ জন এবং কালিয়াকৈরে ১৮ জন।

এছাড়াও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজের ১৬ চিকিৎসকসহ মোট ৩৯ জন কোভিড-১৯ মুক্ত হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৫ চিকিৎসক, টঙ্গী রাজস্ব সার্কেল সহকারী কমিশনার (ভূমি), ৫২ জন পুলিশ সদস্য ও তিন সাংবাদিকসহ করোনা শনাক্ত মোট ৩৩৯ জন আইসোলেশনে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২৪ জন চিকিৎসক, ১৬ পুলিশ সদস্য ও একজন সাংবাদিকসহ ২২৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাস নেগেটিভ হওয়ায় তাঁদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

নতুন শনাক্ত ১০ জনসহ বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১২২ জন। মারা গেছেন দুই জন।

কোভিড-১৯ মুক্ত হয়ে ছাড়পত্র পাওয়া ২৪ জন চিকিৎসকের মধ্যে রয়েছেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজের ১৬ চিকিৎসক, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দু’জন (কাপাসিয়ার আব্দুস ছালাম সরকার ও কালিয়াকৈরের প্রবীর কুমার সরকার), কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছয় চিকিৎসক।

শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতাল এন্ড নার্সিং কলেজের পরিচালক ডাক্তার রাজীব হাসান বলেন, গত ১৩ এপ্রিল তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ থাকা অবস্থায় (কোভিড-১৯) করোনা পজেটিভ (আক্রান্ত) শনাক্ত হয়েছে। পরে আরো ১৩ চিকিৎসকসহ হাসপাতালের মোট ৩৯ জন কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়। হোম আইসোলেশনে থেকে কোভিড-১৯ শনাক্ত ৩৯ জনই ’করোনা মুক্ত’ হয়ে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন।

গাজীপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহিন বলেন, ৩ এপ্রিল প্রথম একজন করোনাভাইরাস পজেটিভ (আক্রান্ত) শনাক্ত হয়। এরপর চিকিৎসক, পুলিশ, সাংবাদিকসহ ১২৯ জন করোনা (কোভিড-১৯) পজেটিভ শনাক্ত হয়। তাঁদের মধ্যে এক সাংবাদিকসহ ১৩ জনের করোনাভাইরাস নেগেটিভ হওয়ায় ‘করোনা মুক্ত’ ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। অন্যরা সকলেই হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসাধীন।

তিনি আরো বলেন, করোনা (কোভিড-১৯) পজেটিভ শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজের ১৬ চিকিৎসকসহ ৩৯ জন, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন নার্স, টঙ্গী রাজস্ব সার্কেল সহকারী কমিশনার (ভূমি), গাছা জোনের সহকারী কমিশনারসহ (এসি) গাছা থানার ৩৪ জন ও জিএমপি পুলিশের ২ সদস্য, দুই সাংবাদিক এবং জেলা সিভিল সার্জস অফিসের ২ জন। এর বাহিরে আরো ৪৮ জন। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৭৮০ জনের। এছাড়াও টঙ্গীতে একজনের মূত্যুর পর পাওয়া রিপোর্টে জানা যায় করোনা পজেটিভ।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাদেকুর রহমান আকন্দ বলেন, কালীগঞ্জে ৫৮৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ১০ এপ্রিল কালীগঞ্জের স্থানীয় একজনসহ অন্য জেলা থেকে প্রবেশ করেছে এমন আরো ৪ জন করোনাভাইরাস পজেটিভ (আক্রান্ত) শনাক্ত হয়। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৬ চিকিৎসকসহ মোট ৯১ জন করোনা (কোভিড-১৯) পজেটিভ শনাক্ত হয়। তাঁদের মধ্যে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৮ জনকে। বাকি ৮৩ জনকে হোম আইসোলেশনে রাখা হয়।

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস নেগেটিভ হওয়ায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে ৭ জনকে এবং হোম আইসোলেশনে থাকা ৬ চিকিৎসক ও ১৬ পুলিশ সদস্যসহ ৮৭ জনকে ‘করোনা মুক্ত’ ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে’। বর্তমানে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন এবং বাকি ৩ জন হোম আইসোলেশনে থেকে টেলিমিডিসিন সেবার মাধ্যমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম সরকার বলেন, কাপাসিয়ায় মোট ৭৬২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ১০ এপ্রিল প্রথম একজন (কোভিড-১৯) পজেটিভ শনাক্ত হয়। এরপর আমি নিজে ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরো ৩০ জনসহ মোট ৭০ জন করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পজেটিভ শনাক্ত হয়। তাঁদের মধ্যে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৩ জনকে। কাপাসিয়ায় আরো ৬৭ জনকে হোম আইসোলেশনে রাখা হয়। আইসোলেশনে থাকা ৫২ জনের করোনাভাইরাস নেগেটিভ হওয়ায় ‘করোনা মুক্ত’ ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রবীর কুমার সরকার বলেন, এক সাংবাদিক ও আমি নিজেসহ এ পর্যন্ত কালিয়াকৈরে ৩৫ করোনা (কোভিড-১৯) পজেটিভ শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে করোনাভাইরাস নেগেটিভ হওয়ায় ১৮ জনকে ‘করোনা মুক্ত’ ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুইজন ভর্তি আছেন। হোম আইসোলেশনে আছেন আরো ১৬ জন। কালিয়াকৈরে এ পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৬১৩ জনের।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এএসএম ফাতেহ্ আকরাম বলেন, শ্রীপুরে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৬৩৩ জনের। করোনা (কোভিড-১৯) পজেটিভ শনাক্ত হয়েছেন এক চিকিৎসকসহ ২৩ জন। করোনাভাইরাস নেগেটিভ হওয়ায় ‘করোনা মুক্ত’ ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ১৮ জনকে। তাঁদের মধ্যে ১৪ জন পুুরুষ এবং ৪ জন নারী। কোভিড-১৯ শনাক্ত একজন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং হোম আইসোলেশনে আছেন আরো ৩ জন। এছাড়াও একজনের মূত্যুর পর পাওয়া রিপোর্টে জানা যায় করোনা পজেটিভ।

 

এ সংক্রান্ত আরো জানতে……….

কালীগঞ্জে ছয় চিকিৎসক ও ১৬ পুলিশসহ ‘করোনা মুক্ত’ ৮৫ জন

গাজীপুরে ‘করোনা মুক্ত’ ছাড়পত্র পেলেন সাত চিকিৎসকসহ ১১৮ জন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button