ভূমধ্যসাগরের ‘পাচারকারীরা মাথাপিছু ১০ লাখ টাকা করে নিয়েছিল’

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : পুলিশের বিশেষ বাহিনী র‍্যাব বলেছে, ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির শিকার বাংলাদেশীদের ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করানোর আগেই মানবপাচারকারিরা জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে নিয়েছিল।

র‍্যাবের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা যে তিনজন পাচারকারিতে আটক করেছে তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য দিয়েছে।

সমুদ্রপথে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে ৩৯জন বাংলাদেশী নিহত হয়। গত ১০ই মে তিউনিসিয়ার উপকূলে এই ঘটনা ঘটে।

শুক্রবার ভোররাতে র‍্যাব-১ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে।

র‍্যাবের কর্মকর্তারা বলেছেন, অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবির শিকার বাংলাদেশীদের পাচারের সাথে সরাসরি জড়িত ছিল গ্রেফতার হওয়া তিনজন।

র‍্যাব-১ এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, গ্রেফতার হওয়া তিনজনের একজন বিদেশে লোক পাঠানোর একটি এজেন্সির মালিক এবং বাকি দু’জন দালাল।

তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মানব-পাচার চক্রের অনেক তথ্য পাওয়া গেছে বলে এই কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন।

“চক্রটি আসলে অনেক বড়। আমরা যাদেরকে গ্রেফতার করেছি,তারা শরিয়তপুর, সিলেট এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার,” তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, “তারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক সংগ্রহ করে ঢাকায় এনে অবৈধভাবে তাদের বিদেশে পাঠায়।”

“এখানে বাইরের যে লিংকগুলো আছে, এরা বিভিন্ন ধাপে ধাপে থাকে। তারা বাংলাদেশীও হতে পারে বিদেশিও হতে পারে।”

ধাপে ধাপে মানব পাচার
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব বলছে, কয়েকটি ধাপে মানব-পাচারের কাজ করা হয়।

প্রথমে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধভাবে বিদেশে যেতে ইচ্ছুকদের বাছাই করা হয়।

এরপর তাদের পাসপোর্ট, ভিসা, টিকেট কেনার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা নেয়া হয়।

প্রাথমিক কাজ শেষ করে মানব-পাচার চক্রটি রুট চিহ্নিত করে।

র‍্যাব কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ থেকে তুরস্কের ইস্তাম্বুল হয়ে লিবিয়া একটি রুট, বাংলাদেশ থেকে ভারত-শ্রীলংকা হয়ে লিবিয়া এবং দুবাই-জর্ডান হয়ে লিবিয়া – এই তিনটি রুট ব্যবহার করা হয়। যে রুটই ব্যবহার করা হোক না কেন, লিবিয়ার ত্রিপলিতে নেয়ার পর সেখান থেকে ইউরোপের দিকে পাঠানো হয়।

র‍্যাবের কর্মকর্তা লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির শিকার বাংলাদেশীদের ঢাকা থেকে ভারত, শ্রীলংকা হয়ে লিবিয়ার ত্রিপলিতে নেয়া হয়েছিল।

“তারা বিভিন্ন রুট ফলো করে। এবার তারা যে রুটটি ফলো করেছে, সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে কলকাতা এবং সেখান থেকে দিল্লি হয়ে শ্রীলংকায় নিয়ে যায়। শ্রীলংকা থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় লিবিয়ার ত্রিপলিতে। ত্রিপলি থেকে নৌকায় করে এই মানুষগুলোকে তারা ইতালির দিকে যাত্রা করিয়েছিল।”

র‍্যাবের কর্মকর্তারা বলেছেন, লিবিয়ার ত্রিপলিতে কয়েকজন বাংলাদেশী এবং বিদেশি মিলিয়ে আরেকটি সিন্ডিকেট আছে, তারা সেখানে ১০ লাখ টাকা প্যাকেজের বাকি অর্থ নিয়ে নৌকায় তুলে দেয়।

কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, নৌকায় পাচারকারী চক্রের কেউ থাকে না। যারা অবৈধভাবে যাচ্ছে, তাদেরকেই নৌকা চালানো এবং দিক নির্ণয়ের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে সাগরে ছেড়ে দেয়।

অবৈধ অভিবাসন নিয়ে কাজ করেন, এমন অনেকে বলেছেন, মানব-পাচারের কোন ঘটনা আলোচনায় এলে তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো তৎপর হয়। কিন্তু মানব-পাচারের বিরুদ্ধে অভিযানের ধারাবাহিকতা থাকে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুখসানা কিবরিয়া বলছিলেন, “মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকে না। এটা সব সময় নজরদারীর মধ্যে রাখা প্রয়োজন। এছাড়া আইনের প্রয়োগও দরকার।”

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা অবশ্য দাবি করছেন, তারা নিয়মিতই মানব-পাচারের বিরুদ্ধে নজরদারী বজায় রাখছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button