একই হাসপাতালে দুই এমপির মৃত্যু, জানাজাও হলো একসঙ্গে

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কয়েক মিনিটের ব্যবধানে একই হাসপাতালে মারা যাওয়া বর্তমান সংসদের দুজন সংসদ সদস্যের জানাজা নামাজ পড়া হলো একসঙ্গে।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে সংসদ সদস্যদের সরকারি বাসভবন ন্যাম ভবন চত্বরে সদ্য প্রয়াত দুই সংসদ সদস্য লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম শাহজাহান কামাল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এরআগে শুক্রবার দিবাগত রাতে মাত্র ১৭ মিনিটের ব্যবধানে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে এই দুই সংসদ সদস্য মারা গেছেন।
রাত ৩টা ২ মিনিটে উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া এবং ৩টা ১৯ মিনিটে একেএম শাহজাহান কামাল মারা গেছেন।
একসঙ্গে দুজন সহকর্মীকে হারিয়ে শোকাহত বর্তমান সরকারের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা। একে একে বেশিরভাগ মন্ত্রী তাদের মৃত্যুতে শোক জানাচ্ছেন।
একাধিকবার বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও ২০০৮ সালের নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য হিসেবে জয়লাভ করেন। ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন তিনি।
আব্দুস সাত্তার ভূঞা ১৯৩৯ সালের ১৬ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আব্দুল হামিদ ভূঞা ও মা রহিমা খাতুন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে আইনজীবী পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি পদে ছিলেন।
১৯৭৯ সালে কুমিল্লা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ও জুনের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে ৪ দলীয় জোট সরকার থেকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে আবদুস সাত্তার আইন, মৎস্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে শাহজাহান কামাল প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-১১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ ও ১৮ সালের তিনি লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। এমধ্যে ২০১৮ সালে প্রায় এক বছর তিনি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলায় গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। পরবর্তী সময়ে তিনি নবগঠিত লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৮৫ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
২০১১ সালে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এদিকে দুই প্রয়াত সংসদ সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা তাদের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।