কালীগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানের উস্কানিতে ইউএনও’র উপর হামলা, আহত ৭

নিজস্ব সংবাদদাতা : কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে এক ইউপি চেয়ারম্যানের উস্কানিতে তার নেতা-কর্মীদের হাতে হামলার শিকার হয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আজিজুর রহমান। এ ঘটনায় ইউএনও সহ আহত হয়েছেন ৭ জন।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ১টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের উপস্থিত উস্কানিতে ইউএনও’র উপরে হামলা চালিয়েছে মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য জাকির হোসেন, ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল ফকির এবং কর্মী কামাল ছাড়াও অজ্ঞাত আরো ৭-১০ জন।
আহতরা হলেন, ইউএনও আজিজুর রহমান, ইউএনও’র গাড়ি চালক রুবেল, আনসার সদস্য আকরাম ও রেজোয়ান, বিআরডিবি অফিসের লিটন আহমেদ, প্রকৌশলী অফিসের রাসেল ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের প্রোগ্রাম উজ্জ্বল কুমার শীল।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শহীদ ময়েজউদ্দিনের ৩৯ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে কালীগঞ্জ আর আর এন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক স্মরণসভার আয়োজন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। স্মরণসভা উপলক্ষে দুপুরে বিভিন্ন এলাকার নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হলেও মোক্তারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একদল নেতা-কর্মী অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরের ভেতরে জড়ো হয়। একই সময়ের উপজেলা পরিষদ চত্বরে জাতীয় কন্যা দিবস উপলক্ষে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীতে অনুষ্ঠান চলছিলো। সে সময় বাহিরে জটলা থাকায় প্রথমে উপজেলা পরিষদের নিরাপত্তার দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা জড়ো হওয়া নেতা-কর্মীদের গাড়ি চত্ত্বরের বাহিরে নিয়ে রাখার অনুরোধ করেন। কিন্তু নেতা-কর্মীরা এতে উত্তেজিত হয়ে উঠে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজুর রহমান নিজে উপস্থিত হয়ে চেয়ারম্যানকে ডেকে বলেন স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ ভিআইপি নেতারা উপজেলা পরিষদে আসার কথা রয়েছে। সম্ভব হলে আপনার নেতা-কর্মীদের গাড়ি বাহিরের খোলা জায়গায় নিয়ে রাখতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান ইউএনও’র সঙ্গে উচ্চ বাক্য বিনিময় করেন। সে সময় তার সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরা এগিয়ে এসে ইউএনও’সহ তাঁর সঙ্গে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘিরে ফেলেন।

একপর্যায়ে ইউএনও’র উপর হামলা চালায় এবং শার্ট ধরে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সে সময় ইউএনও’র সঙ্গে থাকা আনসার সদস্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইউএনওকে রক্ষা করার চেষ্টা করলে তাদের উপরও হামলা চালায় নেতা-কর্মীরা। এতে আনসারসহ ৭ জন আহত হয়েছে। সে সময় চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকলেও তাদের বাঁধা না দিয়ে বরং উস্কে দেন। এতেই এ ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে উত্তেজিত নেতা-কর্মীরা ইউএনও অফিস এবং উপজেলা নির্বাচন অফিসে ইটপাটকেল মারতে থাকে এতে কয়েকটি জানালার গ্লাস ভেঙ্গে যায়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।
এ বিষয়ে জানতে মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের মোবাইল নম্বরে একাধিক বার কল করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আজিজুর রহমান বলেন, বারণ করার পরও চেয়ারম্যান এবং তার নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে জটলার সৃষ্টি করে অটোরিকশা এবং মোটরসাইকেল রাখে। তাদের গাড়ি চত্ত্বরের বাহিরের খোলা স্থানে রাখার অনুরোধ করার পর চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। সে সময় তার সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরা চেয়ারম্যানের উস্কানি পেয়ে আমার এবং সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপর হামলা চালায়। এছাড়াও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে দপ্তরের জানালা ভাঙচুর করে। এতে আমিসহ মোট ৭ জন আহত হয়েছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।