পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গ্রেপ্তার

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার এবং তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) থেকে দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দেশটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

এক মামলার শুনানিতে অংশ নিতে যাওয়ার সময় ইসলামাবাদ হাইকোর্টের সামনে থেকে মঙ্গলবার ইমরান খান গ্রেপ্তার হন। এরপরই রাজধানীতে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা।

ইসলামাবাদ পুলিশ এক টুইটে জানায়, আল–কাদির ট্রাস্ট মামলায় ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পিটিআই নেতাদের অভিযোগ, গ্রেফতারের সময় তাদের চেয়ারম্যান ইমরান খানকে নির্যাতন করা হয়েছে। জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। পিটিআই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছে। এতে সংকটের তীব্রতা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ঋণ না পেলে পাকিস্তান দেউলিয়া হয়ে পড়ার আশঙ্কার মধ্যেই দেশটিতে নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিল।

পাকিস্তানে ২২ কোটি মানুষ ডলারের সংকটে আছে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে ৩৬ শতাংশের ওপরে চলে গেছে। আইএমএফ এর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্যাকেজ পেতেও মাসের পর মাস দেরি হচ্ছে।

অর্থনৈতিক মন্দা:

মুদ্রাস্ফীতি সামাল দিতে পাকিস্তানের সেন্ট্রাল ব্যাংক সুদের হার রেকর্ড ২১ শতাংশ বাড়ানোয় শিল্প উৎপাদন প্রায় থমকে গেছে। খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে নারী ও শিশুরা পদদলিত হয়ে মারা যাচ্ছে। এমন ঘটনা অন্য যে কোনও সময়ের চেয়ে এখন ৪০ শতাংশ বেশি।

বেইলআউট থমকে আছে:

অর্থনৈতিক ভাবে দেশ ধুঁকছে। এর জেরেই আইএমএফ-এর কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য চেয়েছিল পাকিস্তান। আইএমএফ এর সাহায্য (বেইলআউট) প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হবে জুনে। কিন্তু সেই নভেম্বর থেকেই এ সাহায্য থমকে আছে।

আর্থিক সংকট থেকে বের হতে আইএমএফের দ্বারস্থ হওয়া পাকিস্তানকে বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে বেশ কিছু শর্ত মেনে নিয়েছিল ইসলামাবাদ। তবে কিছু শর্ত নিয়ে সমস্যা থাকায় সংকটের সুরাহা হয়নি।

পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে মাত্র একমাস আমদানি চালানো যেতে পারে।

বন্ধুপ্রতীম অন্যান্য দেশ চীন, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছ থেকে পাকিস্তানের ঋণ মওকুফ হওয়ার বিষয়টিও এখনও পুরোপুরি বাস্তব রূপ পায়নি।

রাজস্ব ঘাটতি:

পাকিস্তানে রাজস্ব ঘাটতি অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর রাজস্বে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের অংশগ্রহণ মাত্র ৪৬ শতাংশ, যেখানে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৬৭ শতাংশ। সুদ, ভর্তুকি এবং বেতন-ভাতা সরকারের ওপর এখন একটি বড় বোঝা হয়ে আছে। রূপি দুর্বল হওয়ায় জুন পর্যন্ত এই আর্থিক বছরে রাজস্ব ঘাটতি পূর্বানুমানকেও ছড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নির্বাচন:

পাকিস্তান সাংবিধানিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার পাঞ্জাব প্রদেশে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে স্থানীয় নির্বাচন করার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করায় এ সংকট দেখা দেয়। নির্দেশ না মানলে শেষ পর্যন্ত সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে আদালত। এর আগে আদালত দুইজন প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছিল।

রাজনৈতিক চাপ:

দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া এবং গতবছর প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া ইমরান খান অনবরতই সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছেন। ক্ষমতায় ফেরার লক্ষ্য নিয়ে তিনি রাজনৈতিক প্রচার চালিয়েই যাচ্ছেন।

মঙ্গলবার ইমরান গ্রেপ্তার হওয়ার আগে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। এতে কর্মী–সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, “আমার কথা আপনাদের কাছে পৌঁছানোর সময়ের মধ্যে একটি অবৈধ মামলায় আমাকে বন্দি করা হবে।”

সত্যের পথ থেকে পিছু হটানোর জন্য এমন গ্রেপ্তারি তৎপরতা চালানো হচ্ছে অভিযোগ করে ইমরান বলেন, তারা আমদানি করা সরকারকে তাকে মেনে নেওয়ানোর জন্য এসব করছে। ন্যায়ের জন্য লড়তে সবাইকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান তিনি।

কর্তৃপক্ষ এর আগে গত মার্চ থেকে কয়েক দফায় ইমরানকে গ্রেফতার করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল। লাহোরে তার জামান পার্ক বাসভবনে দফায় দফায় অভিযানে গিয়েও তাকে গ্রেফতার না করেই ফিরতে হয় পুলিশকে।

ইমরান সমর্থক এবং পুলিশের মধ্যে তখন সংঘাতও হয়। এখন ইমরান গ্রেপ্তার হওয়ায় পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যাওয়ার পট প্রস্তুত হল।

প্রভাবশালী সামরিক বাহিনী:

পাকিস্তানের সরকার সাধারণত প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর সমর্থন খোঁজে। সেনাবাহিনী ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশটি শাসন করেছে। দেশটিতে তিনবার রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা থেকে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে।

একজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইমরানের অভিযোগের নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এক বিরল বিবৃতি ইস্যু করার পরই ইমরান খান গ্রেপ্তার হলেন।

ইমরান খান গ্রেপ্তার হওয়ার আগে দায়িত্বে থাকা এক ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুই দফায় অভিযোগ করেন।

ইমরান খানের অভিযোগ, কয়েকবার তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন ওই সেনা কর্মকর্তা।

মঙ্গলবার ইমরান খান রাষ্ট্রদ্রোহ এবং একটি হত্যাচেষ্টার মামলায় হাজিরা দিতে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে গেলে সেখানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ইসলামাবাদে যাত্রার আগে ইমরান খান ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই সেনা কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে কড়া বক্তব্য রাখেন।

জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি:

সরকার বলেছে, সম্প্রতি একের পর এক হামলার মুখে জঙ্গি নির্মূল করতে তারা দেশজুড়ে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেছে। এ ধরনের সর্বশেষ অভিযান হয়েছিল ২০১৪ সালে। এতে দেশের কোটি কোটি ডলার খরচ হয়েছিল। মানুষ মারা গিয়েছিল শত শত এবং উদ্বাস্তু হয়েছিল প্রায় ১০ লাখ মানুষ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button